সফল ফল চাষি ঝিনাইদহের সাইফুল ইসলাম বাবুল





যেদিকেই চোখ যায় শুধু ফল-ফলাদির গাছ আর গাছ। তাতে থোকা থোকা ধরে রয়েছে নানা ধরনের ফল। রীতিমত ফলদ বৃক্ষের চাষ করে ঝিনাইদহে বিপ্লব সৃষ্টি করেছেন সাইফুল ইসলাম বাবুল। স্বল্প জায়গায় ফলদ বিভিন্ন ফলের চাষ করে তিনি ঝিনাইদহের চাষিদের কাছে এখন একজন মডেল কৃষক। তবে জাত কৃষক না হলেও তার মাটি ও ফলদ বৃক্ষের প্রতি এই টান আকৃষ্ট করছে এলাকার অনেক চাষিদের। দীর্ঘ ২২ বছর বাংলাদেশের রফতানিযোগ্য পণ্য তৈরি পোশাক শিল্প ও নীট গার্মেন্টসের একজন সফল পাইওনিয়ার উদ্যোক্তা হিসেবে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ভ্রমণ করেছেন সাইফুল ইসলাম বাবুল। এ সুযোগে বিভিন্ন দেশের ফল চাষ ও তার গুণাগুণ সম্পর্কে জেনে তা দেশে চাষ করতে নিয়ে আসেন। তারপর ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ও বাউকুলের জনক ড. এম. এ. রহিমের

তত্ত্বাবধানে শুরু করেন ফল চাষ। বর্তমানে ঝিনাইদহের এইচ. এস.এস সড়কের শাহ্ ভিলার পৈতৃক বাড়িতে তিনি রোপণ করেছেন কিছু ফলদ গাছ। সম্প্রতি বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ও শাহ্ নার্সারি যৌথভাবে বাউকুল-২ (শাহ্কুল) উদ্ভাবন করেছে। ২০০৭ সালের প্রথমে ঝিনাইদহ শহর থেকে ৬ কিলোমিটার দূরে হরিণাকুণ্ডু উপজেলার নবগঙ্গা নদীর তীরবর্তী মনোরম পরিবেশে পার মথুরাপুর গ্রামে প্রায় ৫ একর জমিতে প্রতিষ্ঠা করেন শাহ্ নার্সারি। এখানে তিনি বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন করছেন প্রায় ৪০ জাতের দেশি-বিদেশি ফল। স্বল্প জায়গায় ফল চাষ করে এলাকার মানুষকে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন। এসব ফলদ বৃক্ষ পরিচর্যার জন্য তিনি নিয়োগ করেছেন ১৫ জন শ্রমিক। চলতি বছর এই ফল বাগান থেকে সমস- খরচ বাদ দিয়ে প্রায় ২৫ লাখ টাকা লাভ করবেন বলে জানান তিনি। ভারত, জার্মানি, সুইজারল্যান্ড, স্পেন, ইটালি, আমেরিকা, সুইডেন, ফিনল্যান্ড, ডেনমার্ক, নরওয়ে, ইউকে, নেদারল্যান্ড ও কানাডাসহ প্রায় ৩০টি দেশ ঘুরে তিনি সংগ্রহ করেছেন বিভিন্ন ফলের চারা। সেই চারা শাহ্ নার্সারিতে রোপণ করে নিবিড় পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে ফলিয়েছেন ফল। সাইফুল ইসলাম বাবুলের নার্সারিতে উৎপাদিত দেশি-বিদেশি

ফলগুলো হল : স্ট্রবেরি, মাল্টা, বারোমাসী কমলালেবু, কানাডিয় কামরাঙা, বাউকুল-১, বাউকুল-২, আপেলকুল, তাইওয়ানকুল, চায়না-৩ লিচু, বেদানা লিচু, লটকন, গোলাপী থাই আপেল, জামরুল, বারোমাসী কাগজি লেবু। আমের ভেতরে রয়েছে : আম্রপলি, মল্লিকা, থাই বারোমাসী আমড়া, সফেদা, থাই আম, বাউ আম, থাই হানিডিউ আম, থাই পেয়ারা, পুনাই আম, বাউ পেয়ারা, জাবাটিকা, নাশপাতি, লংগন, এ্যাভাকোডা, নিউইর্য়ক আমড়া ও মিশরের খেজুর। শাহ্ নার্সারির চারা দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে ফলদ বিপ্লব ছড়িয়ে দিয়েছে। প্রতিদিনই দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে যাচ্ছে এই নার্সারির চারা।

ফলদ বৃক্ষ ও তার সম্ভাবনা নিয়ে কথা বললে সাইফুল ইসলাম বাবুল জানান, খাদ্য পুষ্টির জন্য জনপ্রতি প্রতিদিন ১২০ গ্রাম ফল খাওয়ার প্রয়োজন হলেও তারা খেতে পায় ৩০ গ্রাম। খাদ্য ঘাটতি ও পুষ্টিহীনতায় প্রতি ঘণ্টায় পৃথিবীতে ১০জন করে মারা যায়। তিনি আরো জানান, আমাদের দেশে অনেক পতিত জমি জমি রয়েছে। বাংলাদেশের ৬০ থেকে ৭০ ভাগ মানুষ দরিদ্র এবং তারা গ্রামে বসবাস করে। প্রতিটি পরিবার বাড়ির আঙিনায় ৪টি ফলদ গাছ রোপণ করলে ওই পরিবারের পুষ্টি চাহিদা মেটানো সম্ভব হবে।

সেই সাথে কৃষি শিল্প সহায়ক কৃষি ও সেবামূলক প্রতিষ্ঠানের সমপ্রসারণের মাধ্যমে সাধারণ চাষিদের স্বাভাবিক ফসলের পাশাপাশি ফল চাষ করতে উদ্বুদ্ধকরণের মাধ্যমে দেশের পুষ্টি চাহিদা মিটিয়ে বাকি ফল বিদেশে রফতানি করা সম্ভব। স্বাস্থ্য সচেতনতার জন্য ফলের পুষ্টি গুণাগুণ উল্লেখপূর্বক ফল বাজারজাত করা হলে দেশের পুষ্টি চাহিদা মেটানোসহ দেশের বিভিন্ন প্রানে- ফলদ বিপ্লব ছড়িয়ে দেয়া সম্ভব বলে তিনি মনে করেন।

সাইফুল ইসলাম বাবুলের দেখাদেখি ঝিনাইদহের রুটির ঝুড়ি নামে খ্যাত হরিণাকুণ্ডু উপজেলার শত শত চাষি ফল চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। মিন্টু মিয়া, হাসান মিয়া, আব্দুল হালিম, রশিদ মিয়া, নাগর আলীসহ এই উপজেলার অনেক চাষিই নিজের জমিতে আবার কেউবা বসত বাড়ির আঙিনার পতিত জমিতে দেশি-বিদেশি ফলের চাষ করছেন।


আরো সফল কৃষক:

  • প্রযুক্তি নির্ভর সমন্বিত চাষাবাদ হতে পারে উন্নয়নের হাতিয়ার
  • সবজি চাষে ভাগ্য বদল
  • সফল সবজি চাষি মোবাশ্বির আলী
  • চারা উৎপাদন করে স্বাবলম্বী
  • পেঁপে চাষে সিরাজ মিয়ার ভাগ্য বদল
  • ফলের বাগান করে সফল আজাদ
  • মাছ চাষে সফল খোন্দকার সফিকুল ইসলাম
  • স্ট্রবেরিতে শিশিরের দিনবদল
  • জামাল পুরের কৃষক মোখলেসুর রহমান ধান চাষ করে এখন লাখপতি
  • কলা চাষ করে স্বাবলম্বী রাউজানের হালিম